মানুষ সৃষ্টিশীল প্রাণী! প্রত্যেকের ভেতর লুকিয়ে আছে দারুন দারুন সব প্রতিভা। কিন্তু কিছু খারাপ অভ্যাস এর জন্য কেউ কেউ প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকা সত্বেও কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌছাতে পারেনা। আজ সেই বিষয়ে জানবো- কিভাবে বা কোন কৌশল অবলম্বন করলে একজন ব্যক্তি যেকোন বাজে অভ্যাস থেকে মুক্ত থাকতে পারবে। এই বিষয়ক অনেক রিসার্চ পেপার থিসিস আছে। সেগুলো বলার পূর্বে আপনাদের সাথে শেয়ার করা প্রয়োজন।
সেটা হচ্ছে— আমরা ইদানিং আপনাদের প্রচুর প্রচুর মেসেজ পেয়েছি একটা বিষয়ের উপর। সেটা হলো কিছু বাজে অভ্যাস আছে যা কিছুতেই দূর করতে পারছিনা। অনেক চেষ্টা করেও এর থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। খারাপ অভ্যাসগুলো মধ্যে কমন কয়েকটি হলো- ১. অনলাইন গেমে আসক্ত, ২. সোস্যাল মিডিয়ায় আসক্ত, ৩. অনলাইন জুয়া বা গেমব্লিং, ৪. স্মোকিং, ৫. কোল্ড ড্রিংকস, এবং ৬. নিয়মিত বাজে সাইটগুলোতে ঘোরাঘুরি অভ্যাসের কারনে নিজেরে ক্যারিয়ারে পিছিয়ে পড়ছেন অথবা শারীরিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে যাচ্ছেন।
সংক্ষেপে যেকোন বাজে অভ্যাস ছাড়ার উপায়
আজ আমরা জানবো কিভাবে যেকোন বাজের অভ্যাস থেকে রক্ষা পাবেন তার কয়েকটি সহজ ও কার্যকর কৌশল।
- অভ্যাসের ট্রিগার সনাক্ত করণ
- বিকল্প ভালো কাজ করা
- নিজের কাজের ছোট রিওয়ার্ড পদ্ধতি চালু
- কাছের কাউকে জানিয়ে রাখা
খারাপ অভ্যাস গড়ে উঠা এখন খুবই সহজ কারন, ইন্টারনেটের এই যুগে যেখানে সবকিছু এত সহজেই পাওয়া যায়, সেখানে আমরা প্রায় সবাই কোন না কোন বাজে অভ্যাসের সাথে খুব সহজেই জড়িয়ে যাই। আর যখন মনে হয় যে অভ্যাসটা আসলে আমাদের জন্য খারাপ, তখন আমরা এটা রিয়েলাইজ করতে পারি। তখন ভাবি— আজকেই লাস্ট দিন, কাল থেকে সব ছেড়ে দেব। কিন্তু স্যাডলি, সেই কাল আর আসে না।

একটা সময় আমারও অতিরিক্ত ভিডিও গেম খেলার নেশা ছিল। যে সময় আমার এই বাজে অভ্যাস ছিল, তখন এমনও রাত গেছে যে আমি পুরা রাত শুধুমাত্র ভিডিও গেম খেলে কাটিয়ে দিয়েছি। কিন্তু একটা চরম সত্য কথা হচ্ছে, আমাদের এই বাজে অভ্যাসগুলো যদি এভাবে চলতেই থাকে অথচ আমরা যদি সেগুলো থেকে বের হতে না পারি, তাহলে আমাদের জন্য ফিউচারে খুব ভালো কিছু অপেক্ষা করে নেই। এটা কিন্তু স্বাভাবিক সাইন্স।
আপনি কি ডিজিটাল অ্যামনেশিয়া বিষয়ে শুনেছেন যা প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে হয়। এটিও একধরণের বদ অভ্যাস যা ধীরে ধীরে আমাদের মস্তিষ্ক ধংস করে দিচ্ছে।
কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ আমি এই বাজের অভ্যাসগুলো থেকে বর হতে পেরেছি! কিন্তু কিভাবে এই কাজগুলো করলাম? কিভাবে নিজেরে ভয়ংকর অভ্যাস থেকে মুক্ত করে একটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলাম সেগুলো আপনাদের জানাতেই আজকের এই আয়োজন।
বাজের অভ্যাস গড়ে উঠার কারন
তিনটি বিষয়ের লুপের কারণে বাজে অভ্যাস তৈরি হয়- ট্রিগার, অ্যাকশন, রিওয়ার্ড! বুঝতে কিছুটা অসুবিধা হলেও কিছুক্ষণের মধ্যে ক্লিয়ার হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
ট্রিগার: একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি কিছুটা পরিষ্কার হবে। মনে করুন, আপনি প্রতিদিন রাত ১০টায় টিভি দেখেন। একদিন-দুইদিন করতে করতে এটা এখন আপনার একটা অভ্যাস। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে— এই অভ্যাসটা আসলে হলো কিভাবে? এখানে একটা লুপ কাজ করে। প্রথমত, প্রতিদিন যখন রাত ১০টা বাজে, তখন আপনার ব্রেইন আপনাকে সিগন্যাল দেয় যে টিভি দেখার সময় হয়েছে। এটাকে বলে ট্রিগার।
অ্যাকশন: ট্রিগার অনুযায়ী আপনি প্রতিদিন টিভির সামনে বসেন, টিভি অন করেন এবং দেখা শুরু করেন।
রিওয়ার্ড: তাহলে প্রশ্ন হলো আপনি কাজটা কেন করেন? কাজটা করেন কারণ ব্রেইন আপনাকে একটা রিওয়ার্ড দেয়। টিভি দেখলে ব্রেইন আনন্দ পায়। তাই আপনি কাজটা করেন।
এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কোনো একটা অভ্যাস গড়ে উঠার পেছনে তিনটি কাজের লুপ কাজ করে- প্রথমে ট্রিগার, এরপর কাজ, আর শেষে রিওয়ার্ড।
একটা মজার ব্যাপার হলো, আমাদের ব্রেইন সবসময় সহজ কাজগুলো করতে চায় এবং কিন্তু আবার কঠিন কাজ থেকে দূরে থাকতে চায়। যেমন, আপনি ফোনে স্ক্রল করতে করতে আরামসে ২-৩ ঘন্টা পার করে দিতে পারবেন, কারণ ব্রেইনকে এখানে বেশি কষ্ট করতে হয় না। কিন্তু ম্যাথ করতে গেলে ৩০ মিনিটের পর ভালো লাগবে না, কারণ ব্রেইনকে এখানে এক্টিভলি কাজ করতে হয়। তবে কঠিন কাজও ব্রেইনের কাছে সহজ করে তোলার উপায় আছে, সেটা অন্য টপিকে আলোচনা করবো।
খারাপ অভ্যাস দূর করার উপায়
খারাপ অভ্যাস দূর করার জন্য অনেক ভিডিও, আর্টিকেল বা জার্নাল পাওয়া যায়। কোনো বাজে অভ্যাস হয়ে গেলে তার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সাইকোলজিস্ট এবং নিউ সায়েন্টিস্টরা আসলে কি বলছেন? কিভাবে কার্যরভাবে সহজ উপায়ে এসব ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে ওভারকাম করা যাবে।
Total Time: 7 days
অভ্যাসের ট্রিগার সনাক্ত করণ
যদি আপনার একাধিক বাজে অভ্যাস থাকে তাহলে প্রথমেই কোন অভ্যাসটি বাদ দিতে চান বা এর থেকে মুক্তি পেতে চান সেটি আগে ঠিক করুন। মানুষ কম্পিউটার নয়, একসাথে সব বাদ দিতে গেলে কোনোভাবেই সফল হওয়া সম্ভব নয়।
তাই, প্রথমে ঠিক করুন কোনো কাজের অভ্যাসটি জরুরি ভিত্তিতে বাদ দেওয়া প্রয়োজন। আমার পরামর্শ হলো সেটি ঠিক করুন যা আপনার জন্য ভবিষ্যতে হুমকি ডেকে নিয়ে আসবে।
অভ্যেসটি গড়ে উঠার পরিবেশ সনাক্ত করণ
যে বাজে অভ্যাস থেকে মুক্তি পেতে চান বা দূরে সরে আসতে চান সেটি গড়ে উঠার পেছনের পরিবেশ চিহ্নিত করুন। যেমন- আপনি কোনো বন্ধুর সাথে থাকলে স্মোকিং করেন বা বাসায় একা থাকলে খারাপ সাইটে প্রবেশ করেন সেটি আগে ঠিক করুন।
কোনো সমস্যার কারন চিহ্নিত করতে পারলে সেটি সমাধান করার পথ সহজ হয়ে যায়। তাই আগে চেষ্টা করুন পেছনের কারনটি যার কারনে আপনি ধীরে ধীরে জড়িয়ে গেছেন এই অভ্যাসে।
কাজের বিকল্প ঠিক করুন
যেকোন কাজ থেকে মুক্ত থাকতে হলে অন্য একটি কাজ বিকল্প হিসেবে নিতে হবে। তাহলে আপনার ব্রেইন ধীরে ধীরে অন্য কাজটি অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।
ওই বাজে অভ্যাসের জায়গায় একটি ভালো অভ্যাস রিপ্লেস করতে হবে। যেমন- জাঙ্ক ফুডের বদলে ফলমূল বা সবজি খাওয়া।
ছোটখাটো রিওয়ার্ড পদ্ধতি চালু
আপনার কি মনে আছে, প্রথমে বলেছিলাম ব্রেইন কোনো একটি কাজে অভ্যস্ত হয়ে যায় কারন সে কাজটি করার পর সে আনন্দিত হয়! তাই, অন্য যেকোন ভালো কাজ করার পর নিজেকে ছোট খাটো রিওয়ার্ড দিন। যেমন আজ আপনি ধুমপান করেন এই নিজেকে নিজে ধন্যবাদ দিন।
এভাবে ধীরে ধীরে আপনি বিকল্প কাজে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন। এবং ব্রেইন আগের কাজগুলো ধীরে ধীরে মুছে দিতে শুরু করবে।
অন্যকে জানিয়ে রাখুন
আপনি খারাপ অভ্যাস ছাড়তে যাচ্ছেন, সেটা কাছের কাউকে জানিয়ে রাখুন। তাহলে কাজটা করতে গেলে মনে পড়বে— আপনি অন্য কাউকে বলেছেন।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
আপনার মনে এই প্রশ্নটি হয়তো ঘুরপাক খাচ্ছে, এই পদ্ধতিগুলো কি আসলেই কাজের? সবার ক্ষেত্রে কি কাজ করবে? আমি আসলে আমার নিজের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ টেকনিক ফলো করি।
আমি আশা করবো এইগুলো আপনি ফলো করলে কার্যকরভাবে যেকোন বাজে অভ্যাস থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। অবশ্যই আমাকে পরবর্তীতে ধন্যবাদ জানাবেন।
লং টার্ম গোল ঠিক করা
জীবনে একটি লং টার্ম গোল থাকতে হবে। এলোমেলো জীবন যাপন করে বা বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কিছু করে আসলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা। একটি নির্দিষ্ট গন্তব্য থাকলে সহজেই সেখানে পৌছানো যায় কোনো ডিস্ট্রাকশন ছাড়া।
যেমন- আপনি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা একজন খেলোয়াড় হতে চান, এজন্য প্রতিদিন প্র্যাকটিস করতে হবে। আপনি যদি একজন কোডার বা গ্রাফিক্স ডিজাইনার বা ভিডিও এডিটর হতে চান, প্রতিদিন কোড প্র্যাকটিস করতে হবে।
ধরুন, একঘণ্টা পর আপনার ইম্পর্ট্যান্ট পরীক্ষা আছে। সেই মুহূর্তে কি কোন বাজে কাজ করবেন? উত্তর হওয়া উচিত— না। কারণ জানবেন, বাজে কাজে সময় নষ্ট হলে পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হতে পারে। একইভাবে আপনার জীবনের লং টার্ম গোল যেন বাজে অভ্যাস দ্বারা নষ্ট না হয়।
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস বা ধর্মীয় মূল্যবোধ
ধর্মীয় মূল্যবোধ নিজের মধ্যে জাগ্রত করতে পারলে এই বিষয়ে সমাধান অনেকাংশে সহজ। আপনি যে ধর্মের অনুসারী হন না কেন মাথায় গেঁথে নিতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে সৃষ্টিকর্তা (আল্লাহ) আমাদের প্রতিটি কাজ দেখছেন। সবার চোখ ফাঁকি দিলেও আল্লাহর কাছে হিসাব দিতে হবে।
সারসংক্ষেপ
ক্যারিয়ারের জন্য এবং ব্যক্তিগত জীবনেও প্রত্যেকটা খারাপ অভ্যাস আমাদের জন্য ক্ষতিকর। এতে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছানে যেমন সম্ভব নয় তেমনি পারিবারিক, সামাজিকভাবে ভাবে হেয় পতিপন্ন হতে হয়। তাই ধর্মীয় বিধান মেনে চলা, সময়ের সঠিক ব্যবহার, নির্দিষ্ট গোল অর্জনের জন্য প্রতিদিন কাজ করা এবং মনে রাখা যে আল্লাহ সবকিছু দেখছেন— এসব করলে খারাপ অভ্যাস ভাঙা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
আপনাদের কাছে আমার মতামত কেমন লেগেছে এবং সায়েন্টিস্টদের পদ্ধতি নিয়ে আপনারা কি ভাবেন বা আপনারা নিজের অভিজ্ঞতা কী— অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। নিয়মিত এই ধরণের আয়োজন পেতে আমাদের লাইফ স্টাইল হ্যাকস্ বিভাগের আর্টিকেলগুলো পড়ুন।
বিস্তারিত ধারণার জন্য ভিডিওটি দেখুন
2 Comments
Pingback: কথা বলার ৫টি কৌশল অবলম্বন করলে শ্রোতা মুগ্ধ হতে বাধ্য! - NiceTrix
Pingback: এইচএসসি আইসিটির সাজেশন - ৮ মিনিটে পুরো প্রস্তুতি - HSC ICT Suggestion 2026 - NiceTrix